জীবন বীমা কোম্পানির ৫৪টি আর্থিক নির্দেশক প্রকাশের নির্দেশ

জীবন বীমা কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনে ৫৪টি আর্থিক নির্দেশক প্রকাশের নির্দেশনা দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি চিঠিও দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে আইডিআরএ সূত্রে।


জানা যায়, এখন থেকে যে ৫৪টি তথ্য জীবন বীমা কোম্পানিগুলো প্রকাশ করবে তার মধ্যে— ল্যাপস রেশিও, পলিসির তালিকা, শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস), শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি), শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ, মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও), টার্নওভার, কোম্পানির সারপ্লাস উল্লেখযোগ্য।
এ বিষয়ে আইডিআরএ সদস্য কুদ্দুস খান বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আর্থিক নির্দেশকগুলো প্রকাশের নির্দেশনা জীবন বীমা কোম্পানিগুলোকে দেয়া হয়েছে। বীমা গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষার্থেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।
এত দিন বীমা আইন, ২০১০-এর ২৭ ধারা অনুযায়ী বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করলেও সেখানে আর্থিক নির্দেশক-সংক্রান্ত কোনো তথ্যই থাকত না। সম্প্রতি জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর আর্থিক নির্দেশক-সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের জন্য সাধারণ বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেয়ার পরই এমন নির্দেশনা দেয় আইডিআরএ।
জানা যায়, এ বিষয়ে এর আগে একাধিবার জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা এবং কোম্পানি কর্তৃক নিযুক্ত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।
প্রসঙ্গত, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো অনিরীক্ষিত ও নিরীক্ষিত প্রতিবেদনে টার্নওভার, পরিচালন আয়-ব্যয়, কর-পরবর্তী মুনাফা, শেয়ারপ্রতি আয়, শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্যসহ বিভিন্ন আর্থিক নির্দেশক তথ্য প্রকাশ করে থাকে। এসব তথ্যের ভিত্তিতেই বিনিয়োগকারীরা কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে থাকেন। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হচ্ছে জীবন বীমা কোম্পানিগুলো।
স্টক এক্সচেঞ্জে জীবন বীমা কোম্পানির প্রোফাইলে কোম্পানির আয়-ব্যয়, ইপিএস, এনএভিপিএস-সংক্রান্ত কোনো তথ্যই থাকে না। এ ধরনের কোম্পানি শুধু তাদের তহবিলের পরিমাণ বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করে। আর বিনিয়োগকারীরাও আয়-ব্যয়ের কোনো তথ্য না জেনেই জীবন বীমা কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন। এ অবস্থায় কোম্পানির আর্থিক নির্দেশক তথ্য প্রকাশের উদ্যোগে স্বচ্ছতা প্রকাশ পাবে বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
সুরাত আহমেদ সাব্বির নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, জীবন বীমা কোম্পানিগুলোয় এক রকম অন্ধকারে থেকে বিনিয়োগ করতে হয়। কোম্পানি ভালো না খারাপ, তা বোঝার উপায় নেই। অনেকেই না জেনে নামসর্বস্ব ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে আইডিআরএর এ উদ্যোগে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।
বার্ষিক প্রতিবেদনে আর্থিক নির্দেশক-সংক্রান্ত অতিরিক্ত তথ্যাদি প্রকাশের বিষয়ে সহমত প্রকাশ করেছেন বীমা খাতের প্রধান নির্বহাীরা। এ ধরনের উদ্যোগ বীমা কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করবে। পাশাপাশি সর্বসাধারণের কাছে কোম্পানির আর্থিক চিত্র পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠবে বলে মনে করছেন তারা।
সভায় সাধারণ বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন বলেন, আমাদের দেশের বীমা কোম্পানিগুলো এখনো ১৯৩৮-এর বিধান অনুযায়ী বার্ষিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করছে। তবে ইতোমধ্যে আমাদের পার্শ্ববর্তী অনেক দেশে ১৯৩৮-এর বিধান অনুসরণপূর্বক আর্থিক নির্দেশক-সংক্রান্ত নতুন নতুন তথ্য অন্তর্ভুক্ত করেছে। আমাদেরও বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, একেকটি বীমা কোম্পানি ভিন্ন ভিন্নভাবে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করছে। এভাবে না করে একটি ইউনিফর্মে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রণয়ন করতে হবে। এজন্য কর্তৃপক্ষের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। বার্ষিক প্রতিবেদনে তথ্যাদি প্রকাশের জন্য সব জীবন বীমা কোম্পানিকে আহ্বান জানান তিনি।
প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জালালুল আজিম বলেন, বীমা কোম্পানিগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদনে আর্থিক নির্দেশক-সংক্রান্ত অতিরিক্ত তথ্যাদি প্রকাশ করলে একনজরে কোম্পানির চিত্র উঠে আসবে। ফলে কোম্পানির পলিসিহোল্ডার, শেয়ারহোল্ডার, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পর্ষদ ও কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সবাই উল্লিখিত কোম্পানির সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত হবে।
বর্তমানে শেয়ারবাজারে ১২টি জীবন বীমা কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো— ডেল্টা লাইফ, ফারইস্ট লাইফ, মেঘনা লাইফ, ন্যাশনাল লাইফ, পদ্মা লাইফ, পপুলার লাইফ, প্রগতি লাইফ, প্রাইম লাইফ, প্রগ্রেসিভ লাইফ, রূপালী লাইফ, সন্ধানী লাইফ ও সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স।

Comments