বিএসসির বহরে যুক্ত হচ্ছে নতুন ৬ জাহাজ

জিটুজি ভিত্তিতে চীন সরকারের ঋণে তিনটি নতুন প্রডাক্ট অয়েল ট্যাংকার ও তিনটি নতুন বাল্ক ক্যারিয়ার কিনছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। ২০১৮ সালের মধ্যেই জাহাজগুলো তাদের বহরে যুক্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর এম হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া।
চট্টগ্রামে আয়োজিত শনিবার বার্ষিক সাধারণ সভাকে (এজিএম) সামনে রেখে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, বিএসসির মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে ২৫ থেকে ৩০টি মাদার ট্যাংকার ও সেলুলার কনটেইনার জাহাজ দরকার হলেও গত ২৬ বছরে কোনো জাহাজ কেনা হয়নি। সর্বশেষ ১৯৯১ সালে এমভি বাংলার শিখা নামে একটি জাহাজ কেনা হয়েছিল।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জিটুজি ভিত্তিতে চীন সরকারের ঋণে তিনটি নতুন প্রডাক্ট অয়েল ট্যাংকার ও তিনটি নতুন বাল্ক ক্যারিয়ার ক্রয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চীনা ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের সঙ্গে জাহাজ নির্মাণে চুক্তিও সই হয়েছে।
বিষয়টি একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে খসড়া ঋণচুক্তির প্রস্তাব বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। এক মাসের মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হবে। এর পর জাহাজ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ছয়টি জাহাজের প্রতিটির ধারণক্ষমতা ৩৯ হাজার টন, যেগুলো ২০১৮ সালের মধ্যে বিএসসির বহরে যুক্ত হবে বলে আশা করছেন তিনি। জাহাজগুলো বহরে যুক্ত হলে বিএসসির পরিবহন ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ৩০ থেকে ৩৫ হাজার ডিডব্লিউটিসম্পন্ন নতুন দুটি ক্রুড অয়েল ট্যাংকার এবং এক লাখ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার ডিডব্লিউসম্পন্ন দুটি নতুন মাদার ট্যাংকার ক্রয়ে চীনের ভিন্ন দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে। এছাড়া আরপিওর মাধ্যমে শেয়ার বিক্রির অর্থ দিয়ে বহরে ৩৪ হাজার ডিডব্লিউটিসম্পন্ন একটি কেমিক্যাল বা ক্রুড অয়েল ট্যাংকার সংযোজনের বিষয়টিও মূল্যায়নাধীন রয়েছে।
এক বছরের মধ্যে বিএসসির বহরে জাহাজটি যুক্ত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আগে আমরা পুরনো দুটি জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেই প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছিল। কিন্তু সরকার তা বাতিল করে নতুন জাহাজ কেনার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে নতুন করে প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়েছে।
এছাড়া রামপাল বিদ্যুেকন্দ্র চালু হলে প্রতি মাসে সাড়ে ৪ লাখ টন কয়লা লাগবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কয়লা বিএসসির জাহাজের মাধ্যমে পরিবহনের জন্য এরই মধ্যে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। বিদেশ থেকে কয়লা পরিবহনের জন্য ছয়টি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার ও ১০টি লাইটারেজ বাল্ক ক্যারিয়ার কেনার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিএসসির বহরে ১৩টি জাহাজ ছিল। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে পাঁচটি জাহাজ নিলামে বিক্রির ফলে সংস্থার বহরে জাহাজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল আটে। এর পর আরো পাঁচটি জাহাজ বিক্রি করা হয়। ফলে এখন বিএসসির বহরে মাত্র তিনটি জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজের গড় বয়স ৩০ বছর হওয়ায় এগুলো সীমাবদ্ধ পরিসরে চলাচল করছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে নির্বাহী পরিচালক (টেকনিক্যাল) মো. সাঈদ উল্লাহ, সচিব মোহাম্মদ আবদুল আউয়ালসহ বিএসসির অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪-২০১৫ হিসাব বছরে ৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ৩ টাকা ৯২ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ২ টাকা ৪৭ পয়সা। আলোচ্য হিসাব বছরের জন্য শুধু সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সুপারিশ করেছে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ।
এদিকে ২০১৬ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে ইপিএস দাঁড়ায় (জুলাই-মার্চ) ৮ টাকা, আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৯৭ পয়সা। গত ৩১ মার্চ শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ৬০৩ টাকা।
১৯৭৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ১৩৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৩৬ লাখ ১৯ হাজার ২০০, যার অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা। মোট শেয়ারের মধ্যে ৫২ দশমিক ১ শতাংশ সরকারের হাতে এবং বাকি ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।
 
 
 

Comments