২৩ হাজার কেজি সুতা অবিক্রীত

বিটিএমএর তথ্য
আবু হেনা মুহিব
চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে দেশের বস্ত্র খাত। সুতার উৎপাদন স্বাভাবিকের তুলনায় অন্তত অর্ধেক কমে গেছে। ব্যাংক ঋণের একটা সুরাহা এবং শ্রমিকদের ম্যানেজ করতে পারলে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য অধিকাংশ মালিক এখন সুযোগ খুঁজছেন। এ অবস্থায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ নিয়ে উদ্যোক্তারা সংকটে পড়লেও সরকারের মনোযোগ কাড়তে পারেনি তারা। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন গতকাল সমকালকে জানিয়েছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, বস্ত্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের কাছে দফায় দফায় ধরনা দেওয়া সত্ত্বেও এ পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগ মেলেনি। বারবার চেষ্টা করেও তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সিডিউল পাচ্ছেন না। অবস্থা এ হারে চলতে থাকলে কিছু দিনের মধ্যে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
বিটিএমএ সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত তাদের রেকর্ড ২৩ হাজার কেজি সুতা অবিক্রীত পড়ে আছে। স্থানীয় তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীরা তুলনায় কম দামের সুযোগে স্থানীয় বেশি দামের সুতা ব্যবহার না করে সুতা আমদানি করায় এ অবস্থা দাঁড়িয়েছে। সূত্র মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে কয়েক মাস আগে তুলার সংকট ও উচ্চ মূল্যে কেনা তুলায় উৎপাদন ব্যয় বেশি পড়েছে। কিন্তু বেশি দামে কেনা তুলায় উৎপাদিত সুতার চেয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সুতার দাম অনেক কম হওয়ায় সুতার বিশাল মজুদ দীর্ঘদিন ধরে অবিক্রীত পড়ে আছে।
ব্যবসায়ীদের মতে এ খাতের প্রতিযোগী দেশ তাদের বস্ত্র খাতে নিয়মিত বিরতিতে নতুন নতুন প্রণোদনা সুবিধা দেওয়া, অনুকূল অবকাঠামো এবং প্রণোদনা হারে ব্যাংক সুদের হারে আমদানি করা সুতার সস্তা দামের কাছে দেশি সুতার বাজার মার খাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগী করে তোলার জন্য এ খাতের সম্ভাবনা ও সমস্যা নিয়ে বিটিএমএর বিভিন্ন সময়ের প্রস্তাব সরকার আমলে নেয়নি। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা শেষ হয়ে গেলেও দেশের বস্ত্র খাত সরকারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত একটি টাকারও প্রণোদনা সুবিধা পায়নি। এ ছাড়া গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংক সুদের অস্বাভাবিক হার, বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এ খাতের সংকটের কারণ বলে জানিয়েছেন তারা।
জাহাঙ্গীর আলামিন বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেট পাসের আগে বিটিএমএর পক্ষ থেকে পণ্যের বহুমুখীকরণ ও তুলার ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাসের লক্ষ্যে বিকল্প কাঁচামালের শুল্ক ও কর প্রত্যাহার করাসহ প্রায় ১ ডজন প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু বাজেটে এসব কোনো প্রস্তাব বিবেচনা করা হয়নি। এমনকি কর অবকাশ সুবিধা ২০১৩ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলেও প্রাইমারি টেক্সটাইল খাতকে এর আওতায় রাখা হয়নি। ফলে যে লক্ষ্যে কর অবকাশ সুবিধা বহাল এবং বৃদ্ধি করা হয়েছে তার কোনো সুফল পাওয়া যাবে বলে আমাদের মনে হয় না। ফলে তুলার ওপর নির্ভরশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে, যা সুতার বর্তমান সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে।
তিনি বলেন, নিজেদের উৎপাদিত তুলা ব্যবহার করায় আমাদের প্রতিযোগী ভারত, চীন ও পাকিস্তানের সুতার দাম এখন কম। কারণ এসব দেশ বিশেষ সুবিধায় নিম্ন হারে ব্যাংক সুদ এবং সরকারি অন্যান্য প্রণোদনা সুবিধা দেওয়া হয়। ফলে সেসব দেশে উৎপাদন খরচ কম। সম্প্রতি তুরস্ক কর্তৃক বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও ক্লোদিং সামগ্রীর ওপর সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রাইমারি টেক্সটাইল সেক্টরের মিলগুলোর বিনিয়োগ বর্তমানে মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন।

Comments