এ ছাড়া আগামী রোববার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কাছে এ কোম্পানিগুলো শেয়ার বাজারে ছাড়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) জন্য আবেদন করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য এসইসি’র যে শর্ত ছিলো তা এ ১৪টি কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য নয়। তাই তারা এখন এসইসিতে আবেদন করতে পারবে।
তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা কালে তিনি আমাদের জানিয়েছেন নতুন কোম্পানি আইনের যে শর্ত রয়েছে তা এ ১৪টি কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য নয়।
তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে সকল এখতিয়ার সিকিরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের।
শেখ কবির হোসেন বলেন, সিকিউরিটিজ আইনে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন অবশ্যই ৩০ কোটি টাকা রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফলে বেশির ভাগ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পক্ষে এসইসির শর্ত মেনে আইপিও ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। আজকের বৈঠকের পর এ সবের জটিলতা নিরসন হয়েছে।
যে সব কোম্পানি আইপিও ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে:
জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে- হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পদ্মা ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সান লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
অন্যদিকে সাধারণ বীমা কোম্পানির মধ্যে রয়েছে সাউথ এশিয়ান ইন্স্যুরেন্স, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স এবং দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগের সচিবের সঙ্গে এ বৈঠক হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে বৈঠকে এসইসি সদস্য আরিফ খান, বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা দুই উর্ধ্বতন কমকর্তা এবং অর্থমন্ত্রলালয়ের দুই যুগ্ম সচিব উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, বীমা আইন অনুযায়ী লাইসেন্স পাওয়ার তিন বছরের মধ্যে কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে। কিন্তু এসব ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা না হওয়ায় তারা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারছে না।
এ কারণে এ কোম্পানিগুলোকে প্রতিদিন ১ হাজার টাকা করে জরিমানা গুণতে হচ্ছে। এ জরিমানা থেকে রক্ষার জন্য ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে এসইসির নিয়ম শিথিল করার জন্য আবেদনও করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে ৪০ কোটি টাকা হওয়া বাধ্যতামূলক হওয়ার কারণে বীমা কোম্পানির তালিকাভুক্তি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়।
নতুন বীমা আইনে জীবনবীমা কোম্পানির ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে বীমা আইনের শর্ত পূরণ করলেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে না। এ জটিলতা এড়াতে বীমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের শর্ত শিথিল করার প্রস্তাব দিয়ে জুলাই মাসে প্রথম দিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় এসইসি।
জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য আবেদনকারী বীমা কোম্পানিগুলোর কোনোটির বর্তমান পরিশোধিত মূলধনই ১০ কোটি টাকার বেশি নয়। বীমা আইনে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তাদের পরিশোধিত মূলধন ২৪ কোটি টাকা এবং জীবন বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রে ১৮ কোটি নির্ধারণ করে দেওয়া আছে।
কোম্পানিগুলো উদ্যোক্তা অংশের মূলধনের এ শর্ত পূরণ করে এসইসিকে অবহিত করলে তাদের আইপিও অনুমোদনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
এসইসি সূত্রে জানা গেছে, সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য গত বছরের ২৬ জানুয়ারি এসইসিতে আবেদন করে। কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে ৪ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার ছেড়ে ৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব দিয়েছে। কোম্পানির ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ১০০ টাকা প্রিমিয়াম চাওয়া হয়েছে।
মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যর ৯ লাখ শেয়ার ছেড়ে ৯ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য এসইসিতে আবেদন করেছে। কোম্পানিটি গত বছরের ২৮ এপ্রিল এসইসিতে আবেদন জমা দেয়।
একই দিন আবেদন জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডও। কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে ৯ লাখ শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে সাড়ে ১৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চায়। কোম্পানির ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ৫০ টাকা প্রিমিয়াম চাওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির আইপিওর পরিমাণ ৯ কোটি টাকা। মোট শেয়ারের সংখ্যা ৯ লাখ। প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। কোম্পানিটি গত বছরের ২৯ এপ্রিল এসইসিতে আবেদন জমা দিয়েছে।
পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের আইপিওর মাধ্যমে ১১ কোটি ২৫ হাজার টাকা সংগ্রহের জন্য এসইসিতে আবেদন করেছে। এ কোম্পানির মোট শেয়ারের সংখ্যা ৪ লাখ ৫০ হাজার। প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা এবং শেয়ার প্রতি ১৪৫ টাকা প্রিমিয়াম চাওয়া হয়েছে। এ কোম্পানিও গত বছরের ২৯ এপ্রিল আবেদন করেছে।
ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স পুঁজিবাজার থেকে ৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চায়। ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ৬ কোটি টাকা।
আগের বীমা আইন অনুযায়ী পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশের ৩ বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে শেয়ার ছেড়ে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন ৬ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকায় এবং জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন ৩ কোটি থেকে ৯ কোটি টাকায় উন্নীত করা বাধ্যতামূলক। তবে নতুন বীমা আইনে পরিশোধিত মূলধনের বাধ্যবাধকতা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিটি কোম্পানিকেই উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে মূলধন সংগ্রহের পাশাপাশি আইপিওর পরিমাণও বাড়াতে হবে।
Comments
Post a Comment