শেয়ারবাজার একের পর এক চেক জালিয়াতি, বোকা বনে যাচ্ছে ব্যাংক

একের পর এক চেক জালিয়াতির ঘটনায় উদ্বিগ্ন ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত সপ্তাহে রাজধানীর একটি সিকিউরিটিজ হাউস থেকে ১৭ হাজার টাকার চেকের বিপরীতে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ পরিস্থিতিতে সদস্যদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে ডিএসই। এদিকে চেক জালিয়াতির ঘটনা তদন্তে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নেমেছে। সর্বশেষ আত্মসাৎ হওয়া প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা উদ্ধারের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্যের মাধ্যমে টাকার অঙ্ক লেখা স্থান মুছে ফেলে নতুন করে মোটা অঙ্কের টাকা লিখে সংঘবব্ধ চক্র চেক জালিয়াতি করছে। এ জন্য অনলাইন ব্যাংকিংয়েরও অসৎ ব্যবহার চলছে।
জানা গেছে, প্রতারণা ঠেকাতে ডিএসই কর্তৃপক্ষ চেকে টাকার অঙ্ক কলম দিয়ে লিখে দিতে সদস্য ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি পরামর্শ দিয়েছে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের নামে প্রতিদিনের ইস্যু করা চেকের বিবরণ প্রতিদিনই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে পাঠিয়ে দিতে বলেছে। এ ছাড়া মোটা অঙ্কের চেকের টাকা দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করতে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ডিএসইর পক্ষ থেকে এ ধরনের পরামর্শ দিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এদিকে আগে থেকে সতর্ক থাকার কারণে ইতিমধ্যে আরো কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস চেক জালিয়াতির চেষ্টা ঠেকিয়ে দিয়েছে। তবে এসব সতর্কতার মধ্যেও গত সপ্তাহে ঘটে গেছে চেক জালিয়াতির বড় ঘটনা। শেয়ারবাজারের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত রাজধানীর মতিঝিলপাড়ার ব্রোকারেজ হাউস র‌্যাপিড সিকিউরিটিজ থেকে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা প্রতারক চক্র তুলে নেয়। গত সপ্তাহে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় মামলা করেন প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী হানিফ ভঁূইয়া। এর পর গত মঙ্গলবার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে। সংস্থাটি মঙ্গলবার সারা দিন ব্রোকারেজ হাউসটির টাকা লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত ব্যাংক মতিঝিলের সিটি ব্যাংকের ইসলামী লেনদেন শাখায় তৎপরতা চালায়। একই দিন সংস্থাটি যমুনা ব্যাংক গুলশান শাখায়ও খোঁজখবর নেয়। যমুনা ব্যাংকের টাকা উত্তোলনের সময় ধারণ হওয়া ভিডিও ফুটেজও সংগ্রহ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ফুটেজ দেখে তারা সন্দেহ করছে, ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। এ টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তির কাছ থেকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানান র‌্যাপিড সিকিউরিটিজের স্বত্বাধিকারী হানিফ ভূঁইয়া।
র‌্যাপিড সিকিউরিটিজের মালিক জানান তাঁদের দেওয়া তিনটি চেকের বিপরীতে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন মোমিনুর রশীদ নামের এক ব্যক্তি। তিনটি চেকে মোট ১৭ হাজার টাকা ইস্যু করা হয়েছিল। এই তিনটি চেকেরই কম্পিউটারে টাইপ করা টাকার অঙ্ক পরিবর্তন করে মোমিনুর রশীদ তিন দফায় এক কোটি ৭০ লাখ টাকা উঠিয়ে নেন।
হানিফ ভূঁইয়া জানান, র‌্যাপিড সিকিউরিটিজ হাউসের শেয়ার লেনদেনসংক্রান্ত অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে মতিঝিলের সিটি ব্যাংক ইসলামী লেনদেন শাখায়। সেখান থেকে মোমিনুর রশীদ একটি চেকের বিপরীতে সরাসরি ৭০ লাখ টাকা তোলেন। সিটি ব্যাংকের নামে ইস্যু করা অন্য দুটি চেক তিনি যমুনা ব্যাংক গুলশান শাখায় জমা দেন এবং ৫২ লাখ ও ৪৮ লাখ টাকা তুলে নেন। মোমিনুর রশীদ সিটি ব্যাংকের চেক দুটো যমুনা ব্যাংকে জমা দেন নিজের হিসাব নম্বরে। এরপর সিটি ব্যাংকের প্রধান শাখার ক্লিয়ারিং হাউসের ক্লিয়ারেন্সের মাধ্যমে যমুনা ব্যাংক এই টাকা ইস্যু করে।
জানা গেছে এই টাকা উদ্ধারের জন্য গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে নেমেছে। ইতিমধ্যে তারা মোমিনুর রশীদের সব তথ্য সংগ্রহ করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে মোমিনুর রশীদের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায়। এদিকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে জানতে যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমান গতকাল বুধবার ব্যাংকের গুলশান শাখা পরিদর্শন করেন। সেখানে অবস্থানকালে কালের কণ্ঠের প্রতিবেদককে তিনি বলেন, 'চেক জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমাদের এখান থেকে টাকাটা ক্যাশ হয়েছে। কিন্তু ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে সিটি ব্যাংকের প্রধান শাখা।'
সিটি ব্যাংকের মতিঝিলের ইসলামী লেনদেন শাখার দায়িত্ব পালনরত কর্মকর্তা জাকির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা চেক দেখে টাকা ইস্যু করেছি।' শাখা ব্যবস্থাপক মাসুমা আক্তার বলেন, 'বিষয়টি হেড অফিসের।' তিনি এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত দেড় মাসে ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের সদস্য ৯টি ব্রোকারেজ হাউসে চেক জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে এবং এভাবে হাউসের চেক নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো থেকে কয়েক কোটি টাকা তোলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এর আগে গ্লোব সিকিউরিটিজ থেকে সাত হাজার টাকার বিপরীতে ১৭ লাখ ১০ হাজার টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। মোরশেদ আলম নামে এক ব্যক্তি দ্বিতীয়বার পাঁচ হাজার টাকার আরেকটি চেক আনতে গেলে ব্রোকারেজ হাউস কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয় এবং তাকে আটক করে পুলিশে দেয়। পরে পল্টন থানায় মামলা হয় এবং মোরশেদ আলমের কাছ থেকে ওই টাকা উদ্ধার করা হয় বলে জানান গ্লোব সিকিউরিটিজের স্বত্বাধিকারী আজিজুর রহমান। আজিজুর রহমান মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সতর্ক থাকায় বড় জালিয়াতির ঘটনা ঠেকানো গেছে।'
জানা গেছে এর আগে আল মুনতাহা সিকিউরিটিজ হাউস থেকে একই কায়দায় টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।
যেভাবে চেক জালিয়াতি : শেয়ারবাজারে সংঘবদ্ধ এক প্রতারক চক্র মন্দা শেয়ারবাজার থেকে গত আট মাসে কয়েক কোটি টাকা তুলে নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। প্রথম চেক জালিয়াতির ঘটনা ঘটে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ব্রোকারেজ হাউসে। সেটা নভেম্বর মাসের কথা।
কোনো গ্রাহক নিজ বিও হিসাব থেকে টাকা তুলতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউস অ্যাকাউন্ট পে চেক দেয়। সাধারণত এসব চেকে গ্রাহকের নাম এবং টাকার অঙ্ক নির্দিষ্ট স্থানে কম্পিউটারে কম্পোজ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের ব্যবস্থা চলে এলেও প্রতারকরা এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে কম্পোজ করা অঙ্ক পরিবর্তন করে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেয়। এ ক্ষেত্রে তারা অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধার সুযোগ নিচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে একটি ব্যাংকের এক শাখার চেক অন্য শাখায় জমা দিয়ে তোলা হচ্ছে টাকা। সাধারণত অনলাইনে লেনদেনের জন্য চুক্তিবদ্ধ দুটি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ম্যাগনেটিক ইঙ্ক ক্যারেকটিক রিকগনাইজেশন (এমআরসিআর) চেকের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ইমেজ দেখে চেক ইস্যু করা হয়। এ ইমেজের মাধ্যমে টাকার অঙ্কের স্থানে লেখার পরিবর্তনটি উদ্ঘাটন করা বেশ কঠিন। এ জন্য বিশেষ ধরনের পাওয়ারফুল গ্লাস ব্যবহার করা দরকার পড়ে, যেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যাংকগুলো পরীক্ষা করে না। ফলে জালিয়াত চক্র এই সুযোগটি নিয়ে চেক জালিয়াতি করে টাকা উঠিয়ে নিচ্ছে।
জানা গেছে, প্রতারণার জন্য ওই চক্রের সদস্যরা প্রথমে ব্রোকারেজ হাউসে বিও হিসাব চালু করে। ওই হিসাবে সামান্য কিছু টাকা জমা দিয়ে শেয়ার কেনে। এরপর এই শেয়ার বিক্রি করেই টাকা তোলার জন্য চেক দেওয়ার আবেদন করে। চেক দেওয়া হলে সেটি ঘষামাজা করে বড় অঙ্কের টাকার হিসাব বসানো হয় চেকে।
সম্প্রতি প্রতারকরা এই কৌশলে লংকা-বাংলা সিকিউরিটিজ থেকেও বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। গ্রাহকের নামে ইস্যু করা মাত্র চার হাজার টাকার দুটি চেকে টাকার অঙ্কের ঘরে ৮০ লাখ টাকা লিখে ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। চেকটি লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য সিটি ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় (ডিএসই ভবনে অবস্থিত) আসে। লংকা-বাংলা ওই ব্যাংকের নিয়মিত গ্রাহক। তাই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বড় অঙ্কের এই লেনদেন নিষ্পত্তির আগে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। লংকা-বাংলা কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক কম্পিউটারের হিসাব পরীক্ষা করে বুঝতে পারে, টাকার অঙ্ক পরিবর্তন করে জমা দেওয়া হয়েছে। এরপর ঠেকানো হয় টাকা দেওয়া। এ বিষয়ে মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জানা যায়, মাল্টি সিকিউরিটিজের দুটি দুই হাজার টাকার চেকের বিপরীতে ৬০ লাখ টাকা তুলে নেয় দুই প্রতারক। পরে ওই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মাল্টি সিকিউরিটিজের বিষয়ে তদন্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি কমিটি গঠন করেছে বলে জানা গেছে।
ঢাকার বাইরেও এ ধরনের প্রতারণা চলছে। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের চেক নম্বর ০৯০১৫০১৩১। এক হাজার টাকার এই নম্বরের চেকের বিপরীতে চার লাখ ২৪ হাজার টাকা তুলে নেন মানিক চন্দ্র দে। এভাবে আরো দুটি চেকের মাধ্যমে চার লাখ ৬০ হাজার ও চার লাখ ৮২ হাজার টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু দিনের হিসাব শেষে অ্যাকাউন্টে টাকা কম পাওয়ায় বিষয়টি নজরে আসে শেয়ারবাজারের ব্রোকারেজ হাউস হিসেবে পরিচিত রয়েল ক্যাপিটালের যশোর শাখা ব্যবস্থাপকের। এ দুটো চেক আটকে দিয়ে মানিক চন্দ্র দে'র বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় গত ৪ জুন মামলা করেন শাখা ব্যবস্থাপক মুনির সাত্তার। পরে মানিক চন্দ্রকে আটক করে যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
অনুসন্ধানে ধরা পড়ে, মানিক চন্দ্র দে চেক জালিয়াতির কাজে নিজের নাম ব্যবহার করেনি। তিনি অনু ও আইরিন_এই দুই নামে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট করেন। এ জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র নকল করে ব্যাংক অ্যাকাউন্টও খোলা হয়। সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, মানিক দে তুলে নেওয়া চার লাখ ২৪ টাকা ফেরত দিয়েছেন রয়েল ক্যাপিটালকে। বিনিময়ে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব থেকে সরে আসে রয়েল ক্যাপিটাল কর্তৃপক্ষ। তাই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন শহরের বারান্দিপাড়া নিবাসী মানিক দে।
বেশির ভাগ ব্রোকারেজ হাউস মাস শেষে হিসাব পর্যালোচনা করে বিধায় চেক জালিয়াতির বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে ধরতে পারে না। আর সিকিউরিটিজ হাউসের অ্যাকাউন্টস দুর্বলতার সুযোগে এ চক্র সহজেই টেম্পারিং করে যাচ্ছে। জানা গেছে, ওই চক্র বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলে। এরপর ব্যবসা না করেই কয়েক দিনের মধ্যেই টাকা তোলার অর্ডার দেয়। এক হাজার টাকার চেক অর্ডার কেমিক্যাল দিয়ে পরিবর্তন করে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা তোলে ওই চক্র। এ ব্যাপারে রয়েল ক্যাপিটালের যশোর শাখার ব্যবস্থাপক মুনির সাত্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যশোর ব্রাঞ্চে চেক টেম্পারিং করায় মানিক দেকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। পরে মানিক দের স্ত্রী চার লাখ ২৪ হাজার টাকা টাকা ফেরত দিয়েছেন। এ কারণে কম্পানি মামলা পরিচালনা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি মানিক দে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
লভ্যাংশ গ্রহণে ভুয়া চেক : এ ক্ষেত্রে প্রতারকরা কোনো কম্পানির রেকর্ড ডেটের ঠিক আগের দিন জরুরি ভিত্তিতে শেয়ার কেনার জন্য হাউসের কর্মকর্তাদের চাপ দেয়। ওই দিন শেয়ার কেনা না গেলে বড় অঙ্কের লোকসান হয়ে যাবে_এ ধরনের অজুহাত দেখিয়ে কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করা হয়। এতে কোনো কোনো হাউসের কর্মকর্তারা গ্রাহকের স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করে চেকে উলি্লখিত অঙ্কের সমপরিমাণ টাকার শেয়ার কিনে দেন। পরে ওই চেক ব্যাংকে জমা দেওয়ার পর দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট হিসাবে কোনো টাকা জমা নেই। কিন্তু শেয়ার কেনার পরদিন রেকর্ড ডেট থাকায় প্রতারক চক্রের সদস্যরা কম্পানির দেওয়া লভ্যাংশের অধিকারী হয়ে যায়। ইতিমধ্যে প্রায় ২০-২৫টি ব্রোকারেজ হাউসে এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, খাজা ইক্যুইটি সার্ভিসেস লিমিটেডে জসিম উদ্দিন নাম ব্যবহার করে এক প্রতারক ইউসিবিএল, উত্তরা ব্যাংক ও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শেয়ার কিনে এ ধরনের প্রতারণা করেছেন। ওই চক্রের আরো দুই সদস্য আরিফুজ্জামান ও এম হেমায়েত হোসেন নাম ব্যবহার করে একই কম্পানির শেয়ার কিনে জালিয়াতি করেন। পরে বিষয়টি ধরা পড়লেও ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহারের কারণে তাঁদের ধরা সম্ভব হয়নি। মোনা ফাইন্যান্স, স্টক অ্যান্ড বন্ডসহ কয়েকটি হাউসে অভিনব এই প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে।
ডিএসই সভাপতি মো. শাকিল রিজভী কালের কণ্ঠকে বলেন, সম্প্রতি চেক জালিয়াতির কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানো হয়েছে। এ ঘটনা ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের জন্য অশনি সংকেত। এ জন্য নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সতর্ক থাকা জরুরি। তিনি ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে চেকে টাকার অঙ্ক হাতে লেখার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ব্যাংকগুলোকেও ভূমিকা রাখতে হবে। বড় অঙ্কের টাকা দেখলেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষের উচিত হবে ব্রোকারেজ হাউসটিকে জানিয়ে টাকা দেওয়া। এ ছাড়া প্রতিদিনের ইস্যু করা চেকের বিবরণ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে দিন শেষে জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে বলেও ডিএসই সভাপতি জানান। তিনি বলেন, অনলাইন ব্যাংকিংয়ের সুযোগে জালিয়াতি বেশি ঘটছে। যমুনা ব্যাংক গুলশান শাখায় এ ঘটনা বেশি ঘটেছে বলেও তিনি জানান।


http://www.dailykalerkantho.com/?view=details&type=gold&data=Book&pub_no=567&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&index=0

Comments