এসইসিকে ১৪ বিষয়ে আরও তদন্তের নির্দেশ

পুঁজিবাজার তদন্তের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৪টি বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (এসইসি) নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এসইসি চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে এসইসি পুনর্গঠনের পর এক মাস থেকে তিন মাসের মধ্যে ১৪টি বিষয়ে তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এদিকে শেয়ারবাজার কারসাজির সঙ্গে ব্যাংকগুলোর সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক এসকে সুর চৌধুরীর নেতৃত্বে ৭ সদস্যের এই কমিটি সরকার গঠিত পুুঁজিবাজার তদন্ত কমিটির রিপোর্টের আলোকে বিভিন্ন
বিষয়ে ব্যাংকিং খাতের সম্পৃক্ততা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। কমিটি আগামী তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক অস্বাভাবিক উত্থান-পতন তদন্তের জন্য গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কিছু বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতমাসের শেষের দিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তদন্ত প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি তদন্ত কমিটির বেশ কিছু সুপারিশ অধিকতর তদন্তের কথা বলেন। গত ২৬ জানুয়ারি পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারি ঘটনা তদন্তে কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গত ৭ এপ্রিল তাদের তদন্ত প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রীর কাছে পেশ করে। এতে বেশ কিছু বিষয় অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসইসিকে যে ১৪টি বিষয়ে অধিকতর তদন্তের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে এসইসি পুনর্গঠনের এক মাসের মধ্যে ৮টি এবং ৩ মাসের মধ্যে বাকি ৬টি বিষয়ে তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এসইসি পুনর্গঠনের এক মাসের মধ্যে যে বিষয়ে তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক আলী ফালু এবং সহযোগীদের অমনিবাস অ্যাকাউন্টের ছায়া হিসাব পরীক্ষা করা, অমনিবাস অ্যাকাউন্টের ছায়া হিসাবে কারসাজি, পুঁজিবাজারে মূল্য উল্লম্ফন, সিরিয়াল ট্রেডিং ও কারসাজি, শীর্ষ প্লেয়ারদের সন্দেহজনক লেনদেন, মাত্র দুটি ঠিকানায় ১৯ জনকে ১৯ কোটি টাকার শেয়ার বরাদ্দ, ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে শীর্ষ বিক্রেতাদের কেওয়াইসি ( শহড় িুড়ঁৎ পঁংঃড়সবৎ) পরীক্ষা করা এবং শেয়ার অতিমূল্যায়নে ২০০৯ ও ২০১০ সালে শীর্ষ ৫০টি কোম্পানির বিষয়ে সার্বিক বিষয় তদন্ত করা।
এসইসি পুনর্গঠনের পর তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষে যেসব বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, সম্পদ অধিক মূল্যায়নের টেস্ট কেস ৫ সদস্যের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট কমিটি দিয়ে পুনর্পরীক্ষা, ১৭টি কেস স্টাডিপর্বে চিহ্নিত সমস্যা দূর করা, মোঃ আবদুস সালামের শেয়ারব্যবসা খতিয়ে দেখা, শামীমা শরিফের শেয়ারব্যবসা খতিয়ে দেখা, রাইট শেয়ার/প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুতে অনৈতিকতা খতিয়ে দেখা। এ ক্ষেত্রে এসইসিকে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে ৩ বছরের বাধা-নিষেধের বিষয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে পাবলিক ইস্যু রুলস, ২০০৬-এর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত কমিটি
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বিভিন্ন ব্যাংক সম্পর্কে যেসব বক্তব্য এসেছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, পুঁজিবাজার তদন্ত কমিটির রিপোর্টে যেসব ব্যাংকের নাম বিভিন্নভাবে এসেছে তারা ব্যাংক কোম্পানি আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে কি-না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রয়োজনে বিভিন্ন ব্যাংকে সরেজমিন পরিদর্শন করবে। কমিটি আগামী তিন মাসের মধ্যে তাদের রিপোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে জমা দেবে। একজন নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২ জন মহাব্যবস্থাপক এবং ৪ জন উপ-পরিচালক রয়েছেন।



http://www.samakal.com.bd/details.php?news=13&action=main&option=single&news_id=160677&pub_no=707

Comments