পাটশিল্প পুনরুজ্জীবিত করতে প্রয়োজন পুনর্গঠন ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা




বাংলাদেশে টেকসই দারিদ্র নিরসনে পাটখাতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দেশের গ্রামাঞ্চলে পাটচাষ একটি উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থানের উৎস। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা থাকলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পাটখাত বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি অবদান রাখতে পারতো। সত্তরের দশকে যেখানে দেশের মোট রফতানি আয়ের আশি ভাগই আসতো কাঁচাপাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানি থেকে, সেখানে বর্তমানে তা কমে তিন থেকে চার শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় দেশের পাটশিল্প পুনরুজ্জীবিত করতে সার্বিকভাবে পাটখাতের পুনর্গঠন ও এর দক্ষ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।

সম্প্রতি সরকার গঠিত পাট কমিশনের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, পলিপ্রোপলিন তন্তুর আবির্ভাব ও ব্যাপক প্রচলনের কারণে পাটখাতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু বর্তমানে পরিবেশ সচেনতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় সারাবিশ্বেই পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যবহার বাড়ছে। এই সম্ভাবনা এখন কাজে লাগাতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে পাটের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ যথেষ্ট বেড়েছে। সত্তর দশকের শেষ দিকে দেশে বছরে কাঁচা পাটের উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬০ থেকে ৬৫ লাখ বেল। আশি দশকের শেষ দিকে তা কমে গিয়ে ৪৪ থেকে ৪৭ লাখ বেলে এসে দাঁড়ায়। বর্তমানে কাঁচাপাটের গড় উৎপাদন হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ বেল। তবে চলতি অর্থবছরে কাঁচা পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৪ লাখ ৩৮ হাজার বেল।

প্রসঙ্গত দেশে উৎপাদিত পাটের ৬০ ভাগই অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং বাকি ৪০ ভাগ রপ্তানি হয়। বর্তমানে এ খাত থেকে বছরে গড়ে রপ্তানি আয় হয় প্রায় ৩৩ শ’ কোটি টাকা। ১৯৯০ ও ২০০০ সালে রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে প্রায় ১৫ শ’ কোটি টাকা এবং ১৭শ’ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের মূল্য বৃদ্ধিই বর্তমানে রফতানি আয় বাড়ার প্রধান কারণ।

প্রতিবেদনে পাটশিল্প পুনরুজ্জীবিত করতে উন্নতমানের বীজ উৎপাদন, সহজ শর্তে পাটচাষীদের ঋণ ও প্রশিক্ষণ প্রদান, পাটের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করা, পাটচাষীদের কাছ থেকে সরাসরি পাট কেনা, সরকারি উদ্যোগে গুদাম স্থাপন, পাট শিল্পকে কৃষিভিত্তিক শিল্প ঘোষণা করা, পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন ও বন্ধ পাটকলগুলো চালু করা, ঋণগ্রস্ত বেসরকারি মিলগুলোর সমস্যার সমাধান করা, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে পাটের আন্তর্জাতিক বাজার পর্যক্ষেণ ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন, বিজেএমসিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত করা ও এর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং জাতীয় পাটখাত সমন্বয় কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন।  



Comments